আর্থিক সাক্ষরতা
সাক্ষরতা বা লিটারেসি বলতে আমরা বুঝি লিখতে ও পড়তে পারার সক্ষমতাকে। একইভাবে কম্পিউটার
লিটারেসি বা সাক্ষরতা বলতে আমরা বুঝি কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারার সক্ষমতাকে। এখন
নতুন করে শোনা যাচ্ছে আর্থিক সাক্ষরতা শব্দটি। এটা কি?
সহজভাবে বলতে গেলে আর্থিক সাক্ষরতা হলো টাকা
বা অর্থ পরিচালনা বা ব্যবহর করার দক্ষতা, এ সম্পর্কিত সুযোগ বা ঝুকি সম্পর্কে জ্ঞাত
থাকা। একজন ব্যক্তি আর্থিক সাক্ষর সম্পন্ন হলে তিনি তার উপার্জিত টাকর সঠিক ব্যবহার
করতে পারবেন। এর সাথে টাক পয়সার হিসাব নিকাশ যেমন জড়িত তেমনি টাকার অন্যান্য ব্যবহার
যেমন সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঋণ গ্রহণ ইত্যাদি। একজন ব্যক্তি আর্থিক সাক্ষরতা সম্পন্ন হলে
তিনি দক্ষতার সাথে অর্থ ব্যবস্থাপনা করতে পারেন।
আর্থিক সাক্ষরতা নেই এমন ব্যক্তিগণ আর্থিক
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বা দিধান্বিত থাকেন। তাঁরা আর্থিক সাক্ষরসম্পন্ন ব্যক্তির
চেয়ে আর্থিক জালিয়াতি, প্রতারণা বা অন্যান্য ঝুকি প্রবন থাকেন। তাই আর্থিক সাক্ষরতা
অর্জন খুবই জরুরি বিষয়।
আর্থিক সাক্ষরতা অর্জনে লেখাপড়া জানা বাধ্যতামূলক না। এটি জানা এবং বুঝার বিষয়। আপনাকে দেশে বিদ্যমান আর্থিক বাজার তথা ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সঞ্চয় স্কীম, বীমা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিনিয়োগ বা সঞ্চয় বা ঋণ সম্পর্কিত পণ্য সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে তথ্য থাকে বা প্রচারণা কর্মসূচী থাকে তা থেকে জানা যায়। লোকমুখে শুনেও জানা যায়। আজকাল অধিকাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। ইন্টারনেটে সার্চ করে এ সব বিষয়ে সহজেই তথ্য পাওয়া সম্ভব।
একজন আর্থিক সাক্ষরতাসম্পন্ন লোকের সুবিধা
কি?
ব্যাংক
একাউন্ট: আর্থিক সাক্ষরতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তি চাইবেন তার একটি ব্যাংক হিসাব থাকুক।
ব্যাংক হিসাব থাকলে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা যায়। যে কোন সময় ইচ্ছা করলে উঠানো যায়। ব্যাংক
থেকে টাকা হারিয়ে যাওয়ার কোন ভয় নেই। ব্যাংকের অনেক ধরণের সঞ্চয় স্কীম থাকে। সে সকল
স্কীমে টাকা জমিয়ে লাভবান হওয়া যায়। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা বা অন্য কোন বিনিয়োগ
কাজে লাগানো যায়। ব্যাংকের হিসাব হথে অর্থ অন্য কারো হিসাবে পাঠানো যায়। ব্যাংকের ডেবিট
বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সহজে কেনাকাটা করা যায়। নগদ টাকা পরিবহের ঝুকি এড়ানো
যায়। আমরা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সেবার (নগদ বা বিকাশ এর মত) মাধ্যমে টাকা উঠাতে অনেক
টাকা ব্যয় করি। কিন্তু ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বল্প বা বিনা খরচে টাকা পাঠানো
বা আনা যায়।
বীমা: একজন আর্থিক সাক্ষরতাসম্পন্ন
ব্যক্তি বীমা কি জিনিষ বা এটা করলে কি উপকার বা লাভ সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারেন।
জীবন বীমা এবং সাধারণ বীমার উপরে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এক এক কোম্পানী এক
এক রকমের সুবিধা প্রদান করছে। কোনটা একজন ব্যক্তি বা তার পরিবারের জন্য উপকার হবে তা
একজন আর্থিক সাক্ষর সম্পন্ন ব্যক্তি সহজেই বুঝতে পারবেন।
কিউআর
কোড পেমেন্ট: কুইক রেন্সপন্স (কিউআর) কোড হলো ডিজিটাল পেমেন্টের সহজতম মাধ্যম।
বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলা কিউআর সেবা চালু করেছে যা অনেকগুলি ব্যাংক ও মাবাইল আর্থিক সেবাদাতা
প্রতিষ্ঠানকে একটি প্লাটফর্মে এনেছে। একজন আর্থিক সাক্ষর সম্পন্ন ব্যক্তি খুব সহজেই
তার এ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে রক্ষিত কিউআর এ্যাপস দিয়ে ভিলেজ ডিজিটাল বুথে গিয়ে নগদ
টা উত্তোলন, সরকারী পরিষেবা বিল পরিশোধ, টাকা স্থানান্তর ইত্যাদি সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
ই-কমার্স: ই-কমার্স বা ইলেক্ট্রনিক
কমার্স এর মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইনে জিনিষপত্র ক্রয় বিক্রয় করা যায়। একজন আর্থিক সাক্ষর
সম্পন্ন ব্যক্তি তার মোবাইল হতে যে কোন অনলাইন মার্কেটপ্লেস হতে দ্রব্যাদি কেনাকাটা
করতে পারেন। ডিজিটাল বুথে গিয়েও এ সেবা নেয়া যাবে।
বর্তমানের এ ডিজিটাল যুগে বাস করে আর্থিক
সাক্ষরতা অর্জন না করলে তিনি অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়বেন। তাই আর্থিক সাক্ষতা অর্জন
করা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদের দেশে অনেকে এখনও সঞ্চিত অর্থ ঘরে রাখেন
বা কারোর কাছে জমা রাখেন যা যে কোন সময়ে তশ্রুফ হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু তিনি যদি
আর্থিক সাক্ষর সম্পন্ন হতে তাহলে কখনও এভাবে টাকা জমাতেন না। তিনি অবশ্যই রাষ্ট্রীয়ভাবে
সীকৃত কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বা সঞ্চয় স্কীমের অধীনে জমা রাখতেন বা লাভজনক
কোন বিনিয়োগ স্কীমে বিনিয়োগ করতেন। এটি করলে একদিকে যেমন লাভবান হওয়া যায় অপরদিকে অর্থ
তশ্রুফের কোন ভয় থাকে না। তবে আমাদের দেশে অবশ্য বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ সকল প্রতিষ্ঠানের
সেবা লভ্য না হওয়ায় মানুষ তা জানতে পারে না।
জয়তুন বিজনেস সলুশনস সরকারের এসপায়ার টু ইনোভেট
(এটুআই) প্রোগ্রামের সাথে যৌথ উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে ভিলেজ ডিজিটাল বুথ স্থাপনের উদ্যোগ
নিয়েছে। এ বুথে সকল প্রকার আর্থিক লেনদেন, সরকারী বিল পরিশোধ ইত্যাদি সেবা পাওয়ার পাশাপাশি
বুথের আওতাধীন গ্রাম বা গ্রামসমুহের বাসিন্দাদের মধ্যে আর্থিক সাক্ষরতা সম্পর্কে সচেতনতা
কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে।
আর্থিক সাক্ষরতা সম্পর্কে বুঝতে হলে নীচের কয়েকটি বিষয়ে জ্ঞান
থাকতে হবে, যেমন,
আর্থিক পরিকল্পনা
সাধারণভাবে
একজন মানুষের বর্তমান ও সম্ভাব্য আয়ের উপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ব্যয় (সাধারণ ও বিশেষ)
এবং সম্ভাব্য সঞ্চয়ের আগাম হিসাব প্রস্তুতিকেই আর্থিক পরিকল্পনা বলা হয়। বিশেষ ব্যয়
বলতে আমরা পরিস্থিতির কারণে উদ্ভূত আকষ্মিক ব্যয়কে বুঝি। যেমন: হঠাৎ অসুস্থতা, দুর্ঘটনা,
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি।
আর্থিক
পরিকল্পনা কেন প্রয়োজন?
আয় বুঝে
ব্যয় করাই মূলতঃ আর্থিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। আর্থিক পরিকল্পনায় বর্তমান আয় এবং সম্ভাব্য
আয়ের উৎসসমূহ চিহ্নিত করা হয়। একই সাথে, ভবিষ্যতে ব্যয় কী হতে পারে, কোন কোন খাতে এ
ব্যয় হতে পারে তা চিহ্নিত করা হয়। একই সাথে সঞ্চয়ের বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হয়। ভবিষ্যতে
হঠাৎ অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে তা কিভাবে মেটানো হবে, সে বিষয়ের একটা রূপরেখা থাকে।
তাই নিরাপদ ভবিষ্যত এবং আকস্মিক চাহিদা মেটানোর তাগিদে প্রত্যেকের আর্থিক পরিকল্পনা
সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন।
সঠিক
আর্থিক পরিকল্পনা কিভাবে করা যায়?
সঠিক
বাজেট ব্যবস্থাপনা তথা আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার মাধ্যমে সঠিক আর্থিক পরকিল্পনা
করা যায়।
ü নিজ নিজ আর্থিক অবস্থার
মূল্যায়ন করা;
ü কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে
আর্থিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা চিহ্নিত করাসহ আর্থিক প্রয়োজনীয়তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ভাগ
করা; যেমন: স্বল্প মেয়াদ (০১ বছর), মধ্য মেয়াদ (০১ থেকে ০৫ বছর) এবং দীর্ঘ মেয়াদ (০৫
বছরের অধিক);
ü প্রতিটি প্রয়োজনের
বিপরীতে সপ্তাহে/মাসে কত সঞ্চয় করতে হবে তা হিসাব করা;
ü মেয়াদ অনুযায়ী সম্ভাব্য
প্রত্যেক প্রয়োজনের বিপরীতে অর্থ সংস্থান করা;
ü নিয়মিত নিজের সঞ্চয়ের
পর্যালোচনা করা এবং মাস শেষে সঞ্চয়ের হিসাব করা;
ü আয়, ব্যয় ও সঞ্চয়
হিসাবের জন্য আর্থিক ডায়েরি ব্যবহার করা এবং৪. বাজেট কী?উত্তর: আয় ও ব্যয়ের সঠিক পরিকল্পনাই
হলো বাজেট। বাজেট হলো আয়ের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর
পরিকল্পনা।
ব্যক্তিগত
বাজেট করার প্রক্রিয়া কী?
ব্যক্তিগত
বাজেট করার প্রক্রিয়া হল:
ü নিজের আয় নির্ধারণ
ü মাসিক খরচের তালিকা
প্রণয়ন
ü আবশ্যিক ব্যয় ও পরিবর্তনশীল
ব্যয় নির্ধারণ
ü আয় ও ব্যয়ের পার্থক্য
নিরূপণ
ü পরিবর্তনশীল ব্যয়সমূহ
সমন্বয়করণ
ü সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে
করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
ü প্রক্রিয়াটির সাথে
অভ্যস্ত হওয়া ও আর্থিক ডায়েরি পরিচালনা করা